দুর্দিনের অন্ধকার থেকে সাফল্যের আলো : কোহিনুরের উদ্যোগের গল্প
কোহিনুর একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলে প্রায় এক বছর প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ২০১৯ সালের আগস্টে পারিপার্শ্বিক কারণে তিনি দায়িত্ব ছেড়ে দেন। এরপর তার হাজবেন্ড তাকে ব্যস্ত রাখতে “কুষ্টিয়ার হাট অনলাইন শপিং” নামে একটি পেইজ ও গ্রুপ খোলেন, যার কার্যক্রম শুরু হয় কোহিনুরের জন্মদিনে, ২৩ অক্টোবর। প্রথমে থ্রি-পিস ও সরিষার তেল বিক্রি শুরু করেন, কিন্তু গুণগত মান নিয়ে সন্তুষ্ট না হওয়ায় তিনি শান্তি পাচ্ছিলেন না। তার বড় ফুফু শাশুড়ি Mahbuba Sultana Zhorna-এর পরামর্শে তিনি ঢেঁকিছাটা চাউলের গুঁড়া যোগ করার কথা ভাবেন, কিন্তু শহরে থাকায় সাহস পাচ্ছিলেন না।
তারপর এলো করোনার দুর্দিন। হাজবেন্ডের বেতন বন্ধ, বাসা ভাড়া দেওয়ার টাকা নেই, ছেলের স্কুলের ফি দিতে না পেরে অনলাইন ক্লাস বন্ধ করতে হয়। সাতজনের সংসারে দেনা ও হতাশা তাদের ঘিরে ধরে। বাধ্য হয়ে গ্রামের বাড়িতে ফিরে আসেন। এই কঠিন সময়ে Mst Joti Akter ও Lubna Yesmin তাকে কুনাউ গ্রুপের কথা বলেন। ২০২০ সালের ২৪ জুলাই তিনি কুনাউ-এ জয়েন করেন, যখন গ্রুপে সদস্য ছিল মাত্র ৭০-৮০ জন।
কুনাউ-এ নিয়মিত পোস্ট শুরু করেন কোহিনুর। ঢেঁকিছাটা চাউলের গুঁড়া, সরিষার তেল, আর হাতে কাটা সেমাই বিক্রি শুরু হয়। আস্তে আস্তে পরিচিতি বাড়ে, আর সাথে বাড়ে বিক্রি। পরে তিনি ভাঁপা, চিতই, এবং কুমড়া বড়ি যোগ করেন। বিশেষ করে কুমড়া বড়ি তার জীবন পাল্টে দেয়—কুনাউ-এ ১২০ কেজি কুমড়া বড়ি বিক্রি হয়! এরপর ঢেঁকিতে ছাটা লাল চাউল যোগ করেন, যা প্রচুর বিক্রি হয়। কোহিনুর বলেন, “কুনাউ আমার দুর্দিনের দিশারী। জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত আমার সংসার পুরো আমার ব্যবসার টাকায় চলেছে!” আজ তিনি ধার-দেনা থেকে মুক্তি পেয়ে সন্তান ও সংসার নিয়ে অনেক ভালো আছেন।